বর্ণনা: ডেকিউবিটাস আলসার প্রেশার আলসার, প্রেশার
সোর, বেড সোর এবং কন্ট্যাক্ট আলসার নামেও পরিচিত। এটি
ত্বক এবং ত্বকের ভেতরের টিস্যুগুলোতে সৃষ্ট এক ধরণের ক্ষত যা ত্বকের কোন নির্দিষ্ট
স্থানে অনেক দিন ধরে চাপ লাগার কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত শরীরের
যে সকল স্থানে হাড় থাকে (যেমন- গোড়ালি, পায়ের হীল, কোমর, টেইলবোন) সে সকল স্থানে এই ক্ষত হতে দেখা যায়। কোন ধরণের
অসুস্থতার কারণে যারা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না এবং নড়াচড়া করতে অক্ষম বা হুইল
চেয়ারে বসে সব কাজ করতে হয় বা অনেক দিন ধরে বিছানায় পড়ে আছে তাদের এ ধরণের সমস্যা
হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার বা আরোগ্য লাভের অনেক উপায়
রয়েছে।
কারণ
শরীরের কোন স্থানে অনেক সময় ধরে চাপ লেগে থাকলে সেখানে
এবং তার আশেপাশের টিস্যুগুলোতে রক্তসঞ্চালনের পরিমাণ সীমিত হয়ে যায়। অন্য আরও কিছু
কারণে এরকম হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান ৩ টি কারণ হলো-
·
চাপঃ যখন হুইল চেয়ারে বসা হয় বা বিছানায় শোয়া হয় তখন
হাড় এবং হুইল চেয়ার বা বিছানার উপরিতলের সাথে চাপ লেগে শরীরের ওই অংশে রক্ত
চলাচলের পরিমাণ কমে যায়। কারণ রক্তনালীতে রক্তের চাপের থেকে পারিপার্শ্বিক চাপ
বেশি থাকে। ফলে ঐ স্থান প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান এবং অক্সিজেন পায় না। এই কারণে ওই
স্থানের টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অবশেষে মারা যায়।
·
ঘর্ষণঃ অনেকক্ষণ কোন স্থানে বসে বা শুয়ে থাকার পর সেখান
থেকে সরে যেতে গেলে ত্বকে ঘর্ষণ সৃষ্টি হয়। ত্বক যদি ভেজা বা ঈষৎ আর্দ্র হয় তাহলে
ঘর্ষণের পরিমাণ বাড়তে পারে। ঘর্ষণ আপনার চামড়া দুর্বল করে দেয় এবং ত্বকে ক্ষত
হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
·
ফেটে যাওয়াঃ যখন দুটি তল (চামড়া ও বিছানা) একই সাথে বিপরীত দিকে চলতে থাকে তখন এরকম হতে
পারে।যেমন- হাসপাতালের বিছানা যখন মাথার দিক থেকে উপরে তোলা
হয় তখন আপনি নিচের দিকে পিছলে পড়তে থাকেন। এর ফলে টিস্যু এবং রক্তনালীতে আঘাত
লাগতে পারে। যা আপনার ত্বককে আরও দুর্বল করে তোলে।
লক্ষণ
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:
ত্বকের ক্ষত (Skin lesion)
|
কথা বলতে কষ্ট হওয়া (Difficulty speaking)
|
পা বা পায়ের পাতার ত্বকে ইনফেকশনের লক্ষণ (Skin on leg or foot looks infected)
|
ত্বকের ব্যথা (Skin pain)
|
অনৈচ্ছিক মলত্যাগ (Incontinence of stool)
|
পেনিস বা পুরুষাঙ্গে লালভাব দেখা দেওয়া (Penis redness)
|
ঘ্রান বা স্বাদ নিতে সমস্যা (Disturbance of Smell or Taste)
|
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
থাকার ভঙ্গিমা পরিবর্তন করতে না পারে তাহলে তার প্রেশার
সোর হওয়ার ঝুঁকি থাকে। নড়াচড়া করতে অক্ষম হওয়ার কারণ হলো-
·
সাধারণত দুর্বল
স্বাস্থ্য অথবা দুর্বলতা
·
প্যারালাইসিস বা
অসাড়তা
·
কোন আঘাত বা অসুস্থতার জন্য বিছানায় বিশ্রাম নেওয়া
বা হুইল চেয়ার ব্যবহার করা।
·
সার্জারির পর আরোগ্য লাভের সময়
·
ঘুমের ঔষধ
·
কোমা
অন্য যে সকল কারণে প্রেশার সোর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
সেগুলো হলো-
·
বয়সঃ বয়স্ক মানুষের চামড়া কম বয়সীদের তুলনায় দুর্বল, পাতলা, শুষ্ক
এবং কম স্থিতিস্থাপক হয়ে থাকে। এছাড়াও বয়স বাড়ার সাথে সাথে নতুন ত্বকীয় কোষ সৃষ্টি
হওয়ার প্রবনতা কমতে থাকে।
·
ওজন হ্রাসঃ সাধারণত অনেক দিন ধরে অসুস্থ থাকলে ওজন হ্রাস পায়।
প্যারালাইসিস হলে মাসল অ্যাট্রফি বা মাংসপেশী অক্ষম হয়ে পড়ে। মাংসপেশী এবং ফ্যাটের
পরিমাণ কমে যাওয়ায় হাড় এবং বসার বা শোয়ার স্থানের মধ্যে অতিরিক্ত চাপ সহ্য করার
জন্য কিছু থাকেনা।
·
খাদ্যাভাসঃ প্রত্যেক দিনের খাদ্যাভাসে মানুষের প্রয়োজনীয় পানীয়, ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন
এবং মিনারেলের অভাব পূরণ না হলে ত্বক সুস্থ থাকে না এবং টিস্যু নষ্ট হয়ে যায়।
·
অতিরিক্ত আর্দ্রতা
বা শুষ্কতাঃ অতিরিক্ত আর্দ্র
ত্বক বা অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে ঘর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
·
ধূমপানঃ ধূমপান শরীরে রক্তের প্রবাহের পরিমাণ এবং অক্সিজেন
পরিবহনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তাই ধূমপায়ীদের শরীরের অল্পতেই ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং
তা সারতে অনেক সময় লাগে।
·
সংবেদনশীলতা কমে
যাওয়াঃ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, নিউরোলজিকাল
ডিজঅর্ডার এবং অন্যান্য কিছু অবস্থা সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়।এরকম হলে অনেকে বেড
সোরের ব্যথা ও অস্বস্তি বুঝতে পারেন না। তাই তারা শোয়া বা বসার ভঙ্গিমা পরিবর্তন
করার কথা চিন্তা করেন না।
·
মাংসপেশীর খিচুনিঃ যাদের প্রায়ই মাংসপেশীতে খিঁচুনি বা অন্য কোন
সমস্যা হয় তাদের প্রেশার সোর হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গঃ পুরুষদের
থেকে মহিলাদের ডেকুবিটাস আলসার হওয়ার সম্ভাবনা ১ ভাগ কম থাকে।জাতিঃ সাদা চামড়ার মানুষের ডেকুবিটাস আলসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
থাকে। কাল চামড়ার মানুষের সাদা চামড়ার মানুষের থেকে ২ ভাগ কম হয়। আর হিস্প্যানিক
গোত্রের মানুষের ডেকুবিটাস আলসার হওয়ার সম্ভাবনা সাদা চামড়ার মানুষের থেকে ১ ভাগ
কম হয়।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
·
(ক) পায়ের ত্বকে আলসারের চিকিৎসায় কি মধু ব্যবহার করা যাবে ?
·
উত্তরঃ হ্যাঁ, মধুতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান বিদ্যমান এবং পায়ের যত্নে অনেক আগে থেকে এটি ব্যবহার করা হয়। তবে শুধুমাত্র স্টেরিলাইজড ল্যাবোরেটরি থেকে পরীক্ষিত মধু ব্যবহার করা উচিৎ।
·
(খ) কীভাবে স্টেজ-৪ ডেকুবিটাস আলসারের পরিচর্যা করবো ?
·
উত্তরঃ ষ্টেজ-৪ ডেকুবিটাস আলসার হলে আক্রান্ত স্থানের মাংসপেশী এবং হাড় সেরে ওঠার অযোগ্য
হয়ে পড়ে। এসময় সার্জারি করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সার্জারির পড়েও এ সমস্যা আবার সহজেই
ফিরে আসতে পারে। অপারেশন করার আগে ডেকুবিটাস আলসারের ফিরে আসার সম্ভাবনার কথা জেনে
নিন। ফিরে আসার ঝুঁকি যদি অত্যাধিক হয় তবে অপারেশন না করাই ভাল।
·
(গ) সব আলসার কি প্রেশার আলসার ?
উত্তরঃ না, ত্বকের ক্ষতি হওয়ার কারণ
অনেক হতে পারে। যেমন- আঘাত (ত্বক ফেটে যাওয়া), আর্দ্রতা (জখম,চোট), আর্টেরিয়াল ইনসাফিশিয়েন্সি (আর্টেরিয়াল আলসার), ভেনাস ইনসাফিশিয়েন্সি (ভেনাস আলসার) এবং ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি (ডায়াবেটিক বা নিউরপ্যাথিক আলসার)। এই ধরণের রোগের ক্ষত দেখতে প্রেশার আলসারের মত। ক্ষতের বৈশিষ্ট্য দেখে
নির্বাচন করা হয় কোনটা কোন ধরণের আলসার।
হেলথ টিপস্
·
বসার ভঙ্গিমা
পরিবর্তনঃ হুইল চেয়ার ব্যবহার
করতে হলে ১৫ মিনিট পর পর বসার ভঙ্গিমা পরিবর্তন করুন। শরীরের উপরের অংশে শক্তি
থাকলে মাঝে মাঝে নিজেকে উপরে তুলুন। কিছু কিছু হুইল চেয়ারে নড়াচড়া করার ব্যবস্থা
থাকে। পারলে এরকম হুইল চেয়ার ব্যবহার করুন।
·
শোয়ার ভঙ্গিমা
পরিবর্তনঃ প্রত্যেক ২ ঘণ্টা পর
শোয়ার ভঙ্গিমা পরিবর্তন করুন। বাজারে অনেক যন্ত্র পাওয়া যায় যা আপনার শোয়ার
ভঙ্গিমা পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে। যেমন- ট্রাপেজ বার।
·
ত্বকের যত্নঃ প্রতিদিন আক্রান্ত স্থানে হালকা গরম পানির সাথে
সামান্য পরিমাণে সাবান মিশিয়ে পরিষ্কার করবেন। পরিস্কার
করার পর শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে রাখার জন্য ট্যালকাম পাউডার
ব্যবহার করতে পারেন।
·
খাদ্য ও পুষ্টিঃ একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দৈনন্দিন খাবারের তালিকা
বানিয়ে নিন। এসময় প্রচুর ক্যালরি, প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেলের প্রয়োজন হয়। আপনার
খাদ্যাভাসে ভিটামিন সি এবং জিংকের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। ডেকুবিটাস সোরের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে
হলে যথেস্ট পরিমাণে পানি পান করুন, এর ফলে প্রস্রাবে সমস্যা, কালচে
প্রস্রাব, শুষ্ক মুখ, শুষ্ক ত্বক এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে আসে।
Rx71
No comments:
Post a Comment