বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে তুলসী একমাত্র উদ্ভিদ যা দিন রাত ২৪ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে বায়ু বিশুদ্ধ রাখে, যেখানে অন্য যেকোন গাছ রাত্রিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে । তাই রাতের বেলাতে তুলসী
তলায় শয়ন করাও ব্যক্তির জন্য উপকারী। এর গন্ধবাহী বায়ু যে দিকেই অর্থাৎ দশদিকে যাক না কেন সবদিকে সে বায়ুকে দুষণমুক্ত করে। এছাড়া তুলসী গাছ লাগালে তা মশা কীটপতঙ্গ ও সাপ থেকে দূরে রাখে। আর এইজন্য তুলসীগাছকে বলা হয় ভেষজের রানী।
নিচে এর অসাধারণ গুনের কথা তুলে ধরা হলো:-
১। ক্যান্সার নিরাময়ে
তুলসীর অ্যান্টি কারসেনোজেনিক ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ওরাল ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার এর বৃদ্ধিকে বন্ধ করতে পারে। কারণ এর উপাদানগুলো টিউমারের মধ্যে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। উপকার পেতে প্রতিদিন তুলসীর রস খান।
২। দাঁতের রোগে
তুলসীপাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে দাঁত মাজলে দাঁত ভালো থাকে। এ ছাড়া সরিষার তেলের সাথে তুলসীপাতার গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে দাঁত মাজলে
দাঁত শক্ত ও ভালো থাকে। মুখের দুর্গন্ধ রোধে তুলসী
পাতার মাজন ভালো ফল দিয়ে থাকে।
৩। ডায়াবেটিস রোগে
তুলসী পাতায় এসেনশিয়াল অয়েল ও প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা ইউজেনল, মিথাইল ইউজেনল ও ক্যারিওফাইলিন উৎপন্ন করে। এই উপাদান গুলো অগ্নাশয়ের বিটা সেলকে কাজ করতে সাহায্য করে( বিটা সেল ইনসুলিন জমা রাখে এবং নিঃসৃত করে)। যার ফলে ইনসুলিন এর সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এতে ব্লাড সুগার ও কমে এবং ডায়াবেটিস ভালো হয়।
৪। কিডনি পাথর দূর করতে
রক্তের ইউরিক এসিড-এর লেভেলকে কমাতে সাহায্য করে কিডনিকে পরিষ্কার করে তুলসীপাতা। তুলসীপাতার অ্যাসেটিক এসিড এবং এসেনশিয়াল অয়েল এর উপাদান গুলো কিডনির পাথর ভাঙতে সাহায্য করে ও ব্যাথা কমায়। কিডনির পাথর দূর করার জন্য প্রতিদিন তুলসীপাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে। এভাবে নিয়মিত ৬-৮ মাস খেলে কিডনি পাথর দূর হবে।
৫। নিরাময় ক্ষমতা
তুলসীপাতার অনেক ঔষধি গুনাগুণ আছে। তুলসি পাতা নার্ভ টনিক ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি কারী। এটা শ্বাস নালী থেকে সর্দি–কাশী দূর করে। তুলসীর ক্ষত সারানোর ক্ষমতা আছে। তুলসী পাকস্থলীর শক্তি বৃদ্ধি করে ও অনেক বেশি ঘাম নিঃসৃত হতে সাহায্য করে।
৬। শিশু রোগে
তুলসীপাতার রস শিশুদের জন্য বেশ উপকারী। বিশেষত শিশুদের ঠাণ্ডা লাগা, কাশি লাগা, জ্বর হওয়া, ডায়রিয়া ও বমির জন্য তুলসীপাতার রস ভালো কাজ করে। জলবসন্তের পুঁজ শুকাতেও তুলসী ব্যবহৃত হয়।
৭। মানসিক চাপ কমায়
মানসিক চাপে অ্যান্টিস্ট্রেস Agent হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক অবসাদ প্রশমনে এমনকি প্রতিরোধে তুলসীপাতা চমৎকার কাজ করে। গবেষকরা জানিয়েছেন
কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি প্রতিদিন অন্তত ১০-১২টি তুলসীপাতা দিনে ২বার নিয়মিত চিবাতে পারেন তাহলে সেই ব্যক্তি কখনো মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হবেন না ।
৮। মুখের ঘা দূর করতে
তুলসীপাতা মুখের আলসার ভালো করতে পারে। মুখের ঘা শুকাতেও তুলসী ভালো কাজ করে। মুখের ইনফেকশন দূর করতে তুলসীপাতা
অতুলনীয়। প্রতিদিন কিছু পাতা (দিনে
২বার) নিয়মিত চিবালে মুখের সংক্রমণ রোধ করা যেতে পারে।
৯। মাথা ব্যথা সারাতে
তুলসীপাতা মাথা ব্যাথা ভালো করতে পারে। এর জন্য চন্দনের পেস্ট এর সাথে এটি বাটা মিশিয়ে কপালে লাগালে মাথাব্যথা ভালো হবে।
১২। রক্ত পরিস্কারে
তুলসীপাতা রক্ত পরিষ্কার করে, কোলেস্টেরল কমায় ।
১৩। পোকার কামড়ে
পোকায় কামড় দিলে এটির রস ব্যবহার করলে ব্যথা দূর হয়।
১৪। ডায়রিয়া রোগে
ডায়রিয়া হলে ১০ থেকে ১২টি পাতা পিষে রস খেয়ে ফেলুন। এতে পায়খানা কমে যাবে।
১৫। প্রসাব পরিষ্কারে
এটির বীজ গায়ের চামড়াকে মসৃণ রাখে। বীজ সেবনে প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে থাকে। ফলে প্রসাব বেশি মাত্রায় হয়ে কিডনি পরিস্কার থাকে।
১৬। চোখের রোগ
রাতকানা রোগে নিয়মিত তুলসীপাতার রস ড্রপ হিসেবে ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।
১৭। জ্বর সারাতে
এটি জীবাণু নাশক, ছত্রাক নাশক ও ব্যাক্টেরিয়ানাশক ক্ষমতা আছে। তাই এটা জ্বর ভালো করতে পারে। সাধারণ জ্বর থেকে ম্যালেরিয়ার জ্বর পর্যন্ত ভালো করতে পারে তুলসী পাতা।
এপাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে ফুসফুসীয় সমস্যায়। ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কাশি এবং ঠাণ্ডাজনিত রোগে তুলসীপাতার রস, মধু ও আদা মিশিয়ে পান করলে উপশম পাওয়া যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে তুলসীপাতার রস,লবণ ও লবঙ্গ মিশিয়ে পান করলে ফল পাওয়া যায়।
১৮। প্রসাবে জ্বালাপোড়া
তুলসীর বীজ পানিতে ভিজালে পিচ্ছিল হয়। এই পানিতে চিনি মিশিয়ে শরবতের মত করে খেলে প্রস্রাবজনিত জ্বালা যন্ত্রনায় বিশেষ উপকার হয়।
১৯। দাগ দূর করতে
মুখে বসন্তের কাল দাগে তুলসীর রস মাখলে ঐ দাগ মিলিয়ে যায়। হামের পর যে সব শিশুর শরীরে কালো দাগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তুলসী পাতার রস মাখলে গায়ে স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।
২০। মুখের গন্ধ সারাতে
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান, ভালো ফল পাবেন।
২১। সৌন্দর্য বাড়াতে
ত্বকের চমক বাড়ানো
ছাড়াও ত্বকের বলীরেখা ও ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান ৷
২২। রক্ত শোধনে
কোন কারনে রক্ত দূষিত হলে কাল তুলসিপাতার রস কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়। শ্লেষ্মার জন্য নাক বন্ধ হয়ে কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলে সে সময় শুষ্ক পাতা চূর্ণের নস্যি নিলে সেরে যায়। পাতাচূর্ণ দুই আঙ্গুলের চিমটি দিয়ে ধরে নাক দিয়ে টানতে হয়, সেটাই নস্যি।
২৩। শির ঘুর্নন
যদি কখনও বমি কিংবা মাথা ঘোরা শুরু করে, তাহলে তুলসী রসের মধ্যে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
২৪। রুচি বাড়াতে
সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে রস পান করলে খাবার রুচী বাড়ে।
২৫। ঘা শুকাতে
ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগিয়ে দেন , ঘা কমে যাবে।
২৬। শুক্র ঘন করতে
তুলসী মূল শুক্র গাঢ় কারক। তুলসী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরী পান করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে যৌনদূর্বলতা রোগ সেরে যায়।
২৭। চোখের সমস্যা
এজন্য রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ওই পানি দিয়ে সকালে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
২৮। পুড়ে গেলে
শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রসএবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ ওঠে যাবে।
২৯। চর্মরোগে
তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে বেটে মাখলে চর্ম রোগ ভালো হয়ে যায়।
৩০। পেট খারাপ হলে
তুলসীর ১০-১২ টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান ৷ হাগু একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে!!! মানে পায়খানার ওই সমস্যাটা আর কি!
৩১। জীবানু নাশক
তুলসীপাতা মানবদেহের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে অনন্য। এতে রয়েছে জীবাণুনাশক ও সংক্রমণ শক্তিনাশক উপাদান। দয়া করে লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।
রূপচর্চায় নিমপাতার গুনাগুন
নিমপাতার
গুনাগুন
ও
উপকারিতা
অ্যালোভেরার
১৭টি
বিস্ময়কর
উপকারিতা
জেনে
নিন
অ্যালোভেরার
অপকারিতা
কিসমিসের
পুষ্টিগুণ
ও
স্বাস্থ্য
উপকারিতা
আরও জানুন-
অনেক সুন্দর একটি পোস্ট। আমি এই পোস্টটি পড়ে বেশ উপকৃত হয়েছি। এত সুন্দর একটি পোস্ট পাবলিশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আরো সুন্দর সুন্দর পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteআমার ব্লগের সর্বাধিক জনপ্রিয় পোস্টটি পড়তে আপনাকে স্বাগতম: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পেটের চর্বি / অতিরিক্ত মেদভুড়ি কমানোর সহজ ১০টি উপায়