শীতকালীন চর্মরোগ
আমরা অনেকেই হয়তো জানি যে শীত এলেই কিছু চর্মরোগ নতুন
করে আবির্ভূত হয়। যা গরমকালে খুব একটা দেখা যায় না। রোগীরা একটি অভিযোগ প্রায়ই
করেন, তা হল- শীত এলে শরীর খুব চুলকায়।
এক্ষেত্রে হাতের তালু দিয়ে ত্বক হালকাভাবে চুলকানো যেতে পারে। আবহাওয়া শুষ্ক থাকার
কারণে মূলত এমন চুলকানি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে আপনার ত্বকের ধরন বুঝে চিকিৎসক
ময়েশ্চারাইজার প্রেসক্রাইব করে থাকেন। ময়েশ্চারাইজার পাওয়া না গেলে নারিকেল তেল
ব্যবহার করলেও ত্বক ভালো থাকে। চুলকানির পরিমাণ মারাত্মক হলে গ্লিসারিনের সঙ্গে
পানি মিশিয়ে ব্যবহার করলেও ভাল ফল পাওয়া যায়।
এ সময় প্রচুর শাক-সবজি ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেলে ত্বক আর্দ্র
থাকে। শীতে ত্বকের আরেকটি রোগের নাম ইকথায়েসিস। এটি একটি জন্মগত রোগ এবং শিশুকাল
থেকেই দেখা যায়।
নারী-পুরুষ সমানভাবে এ সমস্যায় আক্রান্ত হন। এ রোগে হাত-পায়ের ত্বক
ফাটাফাটা ও ছোট-ছোট গুড়ি গুড়ি আঁশ পায়ের সামনের অংশ ও হাতের চামড়ায় দেখা যায়। তবে
হাত ও পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থান স্বাভাবিক থাকে।
রোগীরা বলে থাকেন, এ সমস্যাটা ছোটবেলা থেকেই তার আছে। প্রতিবার শীত এলেই বেড়ে যায়।
এদের হাত ও পায়ের তালুর দিকে তাকালে দেখা যায়, হাতের রেখাগুলো খুবই স্পষ্ট। যা
সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় নয়। এ রোগীদের নাক দিয়ে প্রায়ই পানি ঝড়ে এবং
অ্যালার্জি ও অ্যাজমার সমস্যা থাকতে পারে। দুঃখের বিষয় এ রোগটি কখনোই একেবারে ভাল
হয় না।
তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব যদি তৈলাক্ত পদার্থ নিয়মিত ব্যবহার করা
যায়। এক্ষেত্রে আলফাহাইড্রোক্সি এসিড কার্যকর। গ্লিসারিনও ব্যবহার করা যায়। তবে এর
সমস্যা হচ্ছে ত্বক আঠা-আঠা হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে একটি টাওয়েল দিয়ে অতিরিক্ত গ্লিসারিন চেপে তুলে নিলে
ত্বকের আঠালো বা চটচটে ভাব কেটে যায়। ত্বক ভালো রাখা সম্ভব। অ্যাকজিমাও শীত এলে
বাড়তে পারে। তাই এ রোগে আক্রান্তদের বলে দেয়া হয়, ভালো হওয়ার পরও যেন ত্বক শুষ্ক
না হয়। একটি বিশেষ ধরনের অ্যাকজিমা আছে যার নাম অ্যাকজিমা ক্রাকুয়েলেটাম।
এটি সাধারণত ৪০ বছর বেশি বয়সীদের হয় ও শীত এলে বাড়ে। এক্ষেত্রে
ত্বকের গায়ে ফাঁটা ফাঁটা দাগ ও হালকা আঁশ লক্ষ করা যায়। কখনও কখনও ত্বক পুরু হয়ে
পড়তেও দেখা যায়। শীতে ত্বকের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে খোঁচ-পাচড়া বা স্ক্যাবিস।
এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে এবং পরিবারের একজন থেকে আরেকজন সহজেই সংক্রমিত
হয়। তাই সবারই এক সঙ্গে চিকিৎসা প্রয়োজন। মাথায় খুশকি এ সময়ের আরেকটি সমস্যা।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিডেনড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করা যায়।
লেখক : ত্বক ও যৌনব্যাধি বিশেষজ্ঞ, আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা
No comments:
Post a Comment