অ্যালোভেরার ১৭টি বিস্ময়কর উপকারিতা

অ্যালোভেরার উপকারিত অজানা নয়। অ্যালোভেরাকে ঘৃতকুমারীও বলা হয় এটি বহুজীবী ভেষজ উদ্ভিদ এবং দেখতে অনেকটাআনারস গাছের মতো। এর পাতাগুলি পুরু, দু’ধারে করাতের মতো কাঁটা এবং ভেতরে পিচ্ছিল শাঁস থাকে। প্রাচীনকাল থেকেইপ্রাকৃতিক ভেষজ ঔষধ হিসেবে অ্যালোভেরার ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। এই রসালো উদ্ভিদের পাতায় রয়েছে বিশ রকমের খনিজপদার্থ যা মানবদেহের জন্য যে ২২টি এমিনো অ্যাসিড প্রয়োজন সেগুলো এতে বিদ্যমান। এছাড়াও ভিটামিন এ, বি-ওয়ান, বি-টু,বি-ওয়ানটু,বি-সিক্স, সি ও ই রয়েছে।

অ্যালোভেরার পাতার মধ্য যে স্বচ্ছ জেলির মত দেখতে পাওয়া যাই তাকে আমরা জেল বলে জানি। পাতার ঠিক নিচেই থাকে হলুদ রং এর ল্যাটিস এবং তার নিচেই জেল পাওয়া যায়। বহুগুণে গুণান্বিত এই উদ্ভিদের ভেষজ গুণের কমতি নেই। এতে আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন,  ম্যাঙ্গানিজ, ফলিকঅ্যাসিড, জিঙ্ক, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিনএ, বি৬, বি২ ইত্যাদি। অ্যালোভেরার জেল রুপচর্চা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য রক্ষায়ও ব্যবহার হয়ে আসছে। অনেকেই অ্যালোভেরার জুস পান করে থাকেন। অ্যালোভেরায় রয়েছে অসংখ্য বিস্ময়কর উপকারিতা যার মধ্যে ১৭টি আমি এখানে দেখাব।

অ্যালোভেরার ১৭টি অতুলনীয় উপকারিতা

১। হার্ট সুস্থ রাখতে অ্যালোভেরা

আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে অ্যালোভেরার জুস। অ্যালোভেরা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্তর করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। দেহ থেকে দূষিত রক্ত বের করে রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে দীর্ঘদিন আপনার হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।

২। মাংসপেশী ও জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সহায়তা করে থাকে। এমনকি ব্যথার স্থানে অ্যালোভেরা জেলের ক্রিম লাগালে ব্যথা কমে যায়।

৩। দাঁতের যত্নে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরার জুস দাঁত এবং মাড়ির ব্যথা উপশম করে । দাঁতে কোন ইনফেকশন থাকলে তাও দূর করে দেয়। নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ফলে দাঁত ক্ষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৪। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা জুস দেহে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে এবং রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে । ডায়াবেটিসের শুরুর দিকে নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খাওয়া গেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুতরাং খাওয়ার আগে বা খাওয়ার পরে নিয়মিত এর জুস পান করুন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে।

৫। ওজন হ্রাস করতে অ্যালোভেরা

ওজন কমাতে অ্যালভেরা জুস খুবই কার্যকরী। ক্রনিক প্রদাহের কারণে শরীরে মেদ জমে। অ্যালোভেরা জুসের অ্যাণ্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান এই প্রদাহ রোধ করে ওজন কমাতে থাকে। পুষ্টিবিদগণ এই সকল কারণে ডায়েট লিস্টে অ্যালোভেরা জুস রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৬। হজমশক্তি বাড়াতে অ্যালোভেরা

হজমশক্তি বৃদ্ধিতে উহার জুসের জুড়ি নেই। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধ করে, যা হজমশক্তি বাড়িয়ে থাকে। উহা ডায়রিয়ার বিরুদ্ধেও অনেক ভাল কাজ করে।

৭। ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা

ত্বকের যত্নে উহার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। উহা অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরী উপাদান ত্বকের ইনফেকশন দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।

৮। রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা হলঅ্যান্টি ফাঙ্গাল  এবং অ্যান্টি ম্যাইকোবিয়াল  উপাদানসমৃদ্ধ একটি গাছ। এর জুস নিয়মিত পান করলে রোগ-প্রতিরোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহের টক্সিন উপাদান করে দূর করে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৯। মুখের দূরগন্ধ দূর করতে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরায় আছে ভিটামিন-সি, যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে। গবেষণাই দেখা গেছে যে, এর জেল মাউথ ওয়াশ এর বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

১০। ক্যান্সার  প্রতিরোধে অ্যালোভেরা

গবেষণায় দেখা গেছে যে,  অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যালো ইমোডিন, যা স্তন ক্যান্সার ছড়ানো থেকে রোধ করে। এছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধে উহা অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

১১। চুল সুন্দর করতে অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরার গুনাগুন বলে শেষ করা যাই না, মাথায় খুশকি দূর করতে এর কোন তুলনা নেই। এমনকি ঝলমল চুলের জন্যেও উহা অনেক উপকারী। সুতরাং চুলের যত্নে অ্যালোভেরা আপনার নিত্যসংগী।

১২। মুখের ঘা সারাতে অ্যালোভেরা

অনেকের মুখে ঘা হয়, আর এই মুখের ঘা দূর করতে উহা অত্যন্ত কার্যকারী। ঘায়ের জায়গায় এলভেরার জেল লাগিয়ে দিলে মুখের ঘা ভাল হয়।

১৩। রক্তচাপ কমাতে সাহায্য কর

অ্যালোভেরার অনেক গুনাগুনের মধ্যে আর একটি  হল রক্তচাপ কমাতে এর কোন তুলনা নেই। উহার ঔষধি গুণ রক্তচাপ কমায় এবং রক্তে কোলেস্টেরল ও চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে।

১৪। ক্ষতিকারক পদার্থ অপসারণ করতে

কিছু ক্ষতিকর পদার্থ মানব দেহের মধ্যে প্রবেশ করে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করতে পারে। ফলে তা দেহের জন্য মোটেও ভাল কিছু নয়।এই সকল ক্ষতিকর পদার্থ দেহ থেকে অপসারণ প্রয়োজন। উহার রস পান করলে দেহে ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করতে পারে না। আর যদি প্রবেশ করেও ফেলে, তাহলেও অ্যালোভেরার জুস পানে তা অপসারণ হতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার জুসের গুন অপরিসীম।

১৫। চর্মরোগ ও ক্ষত সারাতে

উহা প্রাকৃতিক ঔষধিরও কাজ করে থাকে। বিভিন্ন চর্মরোগ ও ক্ষত সারায় এই অ্যালোভেরার জুসে। অনেক সময় প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এই অ্যালোভেরা।

১৬। ক্লান্তি দূর করতে

দেহের দুর্বলতা দূর করতে অ্যালোভেরার জুসের গুন অনেক। আপনি যদি উহার জুস নিয়মিত পান করেন তাহলে দেহের ক্লান্তি দূর হবে এবং দেহকে সতেজ ও সুন্দর রাখবে।

১৭। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে

উহার জুসের মধ্যে যে জেল থাকে তার অনেক গুন। এই জেল নিয়মিত পানে পেটের সমস্যা দূর হবে। আর যদি সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়া সম্ভাব। এছাড়া উহার জেলে প্রায় ২০ রকম অ্যামিনো অ্যাসিড আছে যা ইনফ্লামেশন এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করে হজম, বুক জ্বালাপোড়া রোধ করে থাকে।

অ্যালোভেরার অসংখ্য উপকারিতার মধ্য আমি এখানে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করেছি। আমি আশা করি, যদি উহা নিয়মিত আপনি ব্যবহার করেন তাহলে অনেক রোগ-বালাই থেকে আপনি খুব সহজে দূরে থাকতে পারবেন।

আরও জানুন-

রূপচর্চায় নিমপাতার গুনাগুন

নিমপাতার গুনাগুন ও উপকারিতা

জেনে নিন অ্যালোভেরার অপকারিতা

Note: আমাদের এই লেখার উদ্দেশ্য চিকিৎসা নয়, জ্ঞানার্জন। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা করা/নেওয়া কোন মতেই উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় যে কোন ঔষুধের ব্যাপারে দয়াকরে চিকিৎসকের পরার্মশ নিন। দয়া করে লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।