দীর্ঘদিনের আমাশয়, পেট ফুলে যাওয়া, তলপেটে ব্যথা, যা পায়খানার পর কমে যায়, এই সমস্যা অনেকেরই হয়ে থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ রোগের নাম মানসিক অস্থিরতাজনিত আমাশয় রোগ বা ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রোম (আইবিএস)। পরিপাকতন্ত্রের এই রোগ নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই।
আমাদের দেশে প্রায় ৯-১০ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। নারী-পুরুষ যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে নারীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মুজিবুর রহমান বলেন, এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি।
কীভাবে বুঝবেন আপনি আক্রান্ত?
এই আমাশয় পরিপাকতন্ত্র কিংবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা, যেকোনো কারণেই হতে পারে। পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাগুলো হলো তলপেটে ব্যথা, যা পায়খানা করার পর কমে যায়, পেট ফুলে ওঠা, পায়খানার সঙ্গে আম যাওয়া, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। এ ছাড়া যেসব উপসর্গ থাকতে পারে—পেটে অনেক শব্দ, বুক জ্বালা, বদহজম, পায়খানা সম্পূর্ণ না হওয়া ইত্যাদি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় মলদ্বারের বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগেন।
আইবিএসের অনেক রোগীই আইবিএসের সঙ্গে অ্যানাল ফিশার, পাইলস রোগে ভুগতে পারেন এবং এ সময় মলদ্বারে ব্যথা, ফুলে যাওয়া ও রক্ত যেতে পারে।
কখনো কখনো চকলেট, দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য, মাংস, ক্রিম, বাটার ইত্যাদি খাওয়ার পর রোগীর সমস্যা প্রকট হয়ে থাকে।
কেন এই রোগ হয়?
এই রোগের কারণ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে বেশ কয়েকটি বিষয়কে এর কারণ হিসেবে মনে করা হয়। যেমন: মানসিক কারণ (উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, অবসাদগ্রস্ততা, ভয় পাওয়া ইত্যাদি), পরিপাকতন্ত্রের পরিবর্তিত চলাচল, পরিপাকতন্ত্রের প্রসারণসংক্রান্ত জটিলতা ইত্যাদি। আর যাঁরা নানাভাবে মানসিক সমস্যায় থাকেন, তাঁরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
রোগ নির্ণয় করবেন কীভাবে?
এই রোগ সাধারণত উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়। কমপক্ষে তিন
মাস যদি রোগের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে এক বা একাধিক পরীক্ষা করতে হবে। তবে ৪০ বছরের কম বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে লক্ষণের ওপর নির্ভর করে রোগ শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা
আইবিএস কোনো ঝুঁকিপূর্ণ, সংক্রামক বা বংশগত রোগও নয়। এ রোগ অন্ত্রের ক্যানসার কিংবা অন্য কোনো ক্যানসারের কারণ নয়। এ কথাগুলো চিকিৎসা শুরুর আগে রোগীকে ভালো করে বোঝাতে হবে। দুশ্চিন্তা করলে রোগটি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এ ছাড়া আরও কিছু নিয়ম মেনে চললে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
প্রথমত, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। দুধ ও দুধজাতীয় খাবার রোগীকে এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া যেসব খাবার খেলে এই রোগের প্রকটতা বাড়ে সেসব খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
মানসিক চাপ কমাতে হবে। এমনকি মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। ব্যায়াম করতে পারেন অথবা মনকে আনন্দ আর প্রশান্তি দিতে পারে এমন কিছু করতে পারেন। ধূমপান বন্ধ করতে হবে। রিলাক্সেশন থেরাপির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যেতে পারে।
ডায়রিয়াপ্রবণ আইবিএসের ক্ষেত্রে কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এ ওষুধগুলো অন্ত্রের নাড়াচাড়া কমানোর মাধ্যমে কাজ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যপ্রবণ আইবিএসের ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি ও অন্য আঁশ এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ল্যাক্সেটিভ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
তবে ওষুধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
No comments:
Post a Comment