আসলে ইংরেজি বললে অনেকেই বোঝে কিন্তু বাংলাটাই বোঝে না বা জানে না। যাই হোক বলছিলাম ‘পাণ্ডু বা জন্ডিস’– এর কথা। অনেক সময় একে ‘ন্যাবা বা কামলাও’ বলা হয়ে থাকে।আসলে এটা কোন বিশেষ রোগ নয় বরং অন্যান্য রোগের সংকেত,লক্ষণ বা উপসর্গমাত্র।
‘পাণ্ডু বা জন্ডিস কি?
শরীরে এক প্রকার রাসায়নিক উপাদান ‘বিলুরুবিন’ এর মাত্রা যখন বেড়ে যায়,যকৃত ও পিত্তাশয়ের কার্যাবলী কমে যায় তখন ত্বকের রঙ এবং চোখের ভিতরের উপর ও নিচের সাদা অংশ হলুদাভ হয়ে যায়। এরুপ অবস্থাকে আমরা ‘পাণ্ডু বা জন্ডিস’ বলে থাকি। বিলুরুবিনের মাত্রা যখন আরও বেড়ে যায় তখন ধূসর বা শ্যামবর্ণ আকারও ধারণ করতে পারে।
কিভাবে ‘পাণ্ডু বা জন্ডিস’ হয় ?
১। শরীরের লোহিত রক্ত কোষ অস্বাভাবিকভাবে ধ্বংস যা বিলুরুবিনের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়
২। লিভার বা যকৃতের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া ও অধাতব বিলুরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
৩। পিত্তথলি বা পিত্তনালীতে যে কোন ধরনের প্রদাহ যেমন ক্যান্সার হওয়া বা পাথর জমা
৪।লোহিত রক্ত কোষ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটা এবং হেমোগ্লোবিন(লোহিত কণার রজক উপাদান) এর পরিমাণ বৃদ্ধি
৫।রজক উপাদান এর শ্বসন এবং কলার ( টিস্যুর)মাঝে রক্তপাত
৬।ভাইরাল –অ্যালকোহলিক–স্বয়ংক্রিয় হেপাটাইটিস,লিভার–সিরোসিস,অ্যাবসেস,অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ সমূহ
৭। পিত্তনালীর বৃদ্ধি সঠিকভাবে না হলে এবং পিত্ত বাহিত হওয়া ব্যাহত হলে
৮।কিছু ঔষধ
যেমন অ্যাসপিরিন এসট্রজেন নিয়মিত সেবন করে থাকলে
৯।বংশগত কিছু রোগ যেমন গিল বার্টস সিনড্রোম, রটোর সিনড্রোম ইত্যাদি
কিভাবে বুঝবেন যে ‘পাণ্ডু’ হয়েছে ?
হাতের তালু,পায়ের তালু,ত্বকের রঙ (সমস্ত বা আংশিক)এবং চোখের ভিতরের উপর ও নিচের সাদা অংশ হলুদাভ হয়ে যায় এমনকি শ্যাম বর্ণ ও হয়ে যায়। হালকা কালো ও ধূসর বর্ণের প্রস্রাব ও পায়খানা হয়। কখনো বা শরীরে চুলকানি অনুভূত হয়।ক্ষুধামন্দা,নিদ্রাহীনতা,বিতৃষ্ণা ও ওজন হ্রাস হয়। হাত,পা,চামড়া
খসখসে ভাব এবং শরীরে পানিশূন্যতা ভাব অনুভূত হয়। খাবারে রুচি ও স্বাদ কমে যায়।
কারা ‘পাণ্ডু বা ন্যাবায়’ ভুগতে পারে ?
শিশু,কিশোর –কিশোরী,যুবক– যুবতী,বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীরা এতে ভুগতে পারে। তবে শিশু ও গর্ভবতীরা ঝুঁকিপূর্ণ কারণ শিশুরা বুঝতে বা বলতে পারে না ঠিকমতো এবং গর্ভবতী নারীদের পাণ্ডুর সাথে সাথে বিভিন্ন যকৃত রোগ ও হেপাটাইটিস এবং সেই সাথে প্রচুর চুলকানি দেখা দিলে,অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকলে গর্ভের সন্তানকে এমনকি অপসারণ পর্যন্ত করতে হতে পারে তবে এটা কম রুগীদের বেলায়ই হয়।
কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় ?
স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন,অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকুন,পুরুষ– পুরুষের
মধ্যে,মেয়ে– মেয়ের মধ্যে, এবং একই সাথে একাধিক যৌন সাথীর সাথে মিলন থেকে বিরত থাকুন,ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলুন। তেলমশলা-লবণ কম খাবেন, প্রচুর পানি, ফলমূল,শাকসবজি এবং এর সাথে আঁশ জাতীয় খাবার (যেমন-লাউ শাক, ডাটা শাক)খাবেন।
যদি হয়েই যায় কিভাবে চিহ্নিত করা যায় ?
দ্রুত আপনার চিকিৎসকের কাছে যান।আপনি পাকস্থলী ও অন্ত্র, পাকস্থলী ও যকৃত (লিভার) অথবা শুধু যকৃত চিকিৎসকের কাছে যাবেন।তিনি আপনার যকৃতের কার্যাবলী পরীক্ষা,রক্ত পরীক্ষা,আলট্রাসনো গ্রাফি,সিটি স্ক্যান,এমআরআই,ইআরসিপি,প্রস্রাব ও পায়খানা পরীক্ষা করাতে পারেন।তখন বলা যাবে কিসের জন্য আপনার পাণ্ডু হয়েছে ।
কি চিকিৎসা করা যায়?
আপনার চিকিৎসক আপনাকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে বলবেন।নিয়মিত গোসল করতে বলবেন। সেই সাথে কিছু ঔষধপত্র দিবেন। এমনকি আপনার (বিশেষত যকৃত,পিত্তনালী ও পিত্তাশয়)অপারেশনের প্রয়োজনও হতে পারে। তবে কিছু দিনের মধ্যেই আপনি আবার আপনার সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন ইনশাল্লাহ।
আবার লিখবো অন্য কোন বিষয় নিয়ে শুধুমাত্র আপনার জন্যই।ভাল থাকবেন সব সময়- সারাক্ষণ। আপনার সুস্থতাই আমার কাম্য।
No comments:
Post a Comment